২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩০ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
অনলাইন ডেস্ক
বিএনপির পদযাত্রার পাল্টা দু’দিন শোভাযাত্রা করেছে আওয়ামী লীগ। রাজধানীতে বড় দুই দলের রাজপথে শক্তি প্রদর্শনের এ লড়াইয়ে যানজটে নাকাল হয় নগরবাসী। কর্মদিবসে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরজুড়ে পাল্টাপাল্টি শোডাউন আর কত দিন চলবে– এমন প্রশ্ন রাখেন ক্ষুব্ধ ভুক্তভোগীরা। অবশ্য বিরোধী দলের সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির প্রতিটি কর্মসূচির পাল্টা শান্তি সমাবেশের মাধ্যমে রাজপথে থাকার ঘোষণা রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের। এ পরিস্থিতিতে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন অনেকে
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদের সফরে বিএনপি নেতাদের আশা পূরণ হয়নি বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি ওই প্রতিনিধিদের মুখে যা শুনতে চেয়েছিল, সেটা তারা পায়নি। প্রতিনিধিরা বিএনপি নেতাদের বলে গেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার কী, সেটা তাদের জানার কোনো দরকার নেই। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। ক্ষমতাসীন দলের দ্বিতীয় দিনের এই শোভাযাত্রায় নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে। সাতরাস্তা থেকে মহাখালী পর্যন্ত শোভাযাত্রার কর্মসূচি ঘোষিত হলেও নেতাকর্মীর ভিড়ে শেষ পর্যন্ত বনানী পর্যন্ত করতে হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, নৈরাজ্য, অপরাজনীতি ও অব্যাহত দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এই শোভাযাত্রা করা হয়। এতে জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে টানা তিন মেয়াদে সরকারের উন্নয়ন ও অগ্রগতির চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। একই দিন ঢাকা মহানগর ছাড়াও রংপুর, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের সব জেলা ও মহানগরে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে আওয়ামী লীগ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতারা আশার মালা গেঁথে প্রহর গুনছিলেন– কখন আসবেন উজরা জেয়া, কখন আসবেন ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা। তারা এসে চলে গেলেন। কিন্তু বিএনপি তাদের মুখে যা শুনতে চেয়েছিল, যা জানতে চেয়েছিল সেটা তারা পায়নি। তাদের চোখ-মুখ শুকিয়ে গেছে। তাদের আশা পূরণ হয়নি। তারা চেয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া নির্বাচন। কিন্তু আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলে গেছে, কাউকে ছাড়া (বাদ দিয়ে) নির্বাচন নয়। বিএনপি এখন গালিগালাজ করছে আশা পূরণ হয়নি বলে। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে। তাদের পরিষ্কার বলতে চাই, নির্বাচনে আসুন। নির্বাচনে না এলে সেটা আপনাদের বিষয়। কিন্তু নির্বাচনে বাধা দিতে এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিরোধ করব।
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাতরাস্তায় আসুন। জনতার ঢল কাকে বলে দেখে যান। এই সমাবেশই বলে দিচ্ছে– দেশের মানুষ কী চায়, কাকে চায়। মানসম্মান রাখতে চাইলে আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে নির্বাচনে আসুন। গতবার তো পেয়েছেন সাতটা আসন। এবার কয়টি পাবেন, সেটা আল্লাহই জানেন। বিএনপি কী দেখিয়ে মানুষের ভোট নেবে? মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা কোন মুখে ভোট চান? খালি মুখে ভোট বাংলার মানুষ আর দেবে না। বিএনপি ও তার ৫৪ দল, ৩৬ দল, ২৭ দফা, এক দফা– ভুয়া। দেশের জনগণ বিএনপির ভুয়া রাজনীতি আর চায় না। সারাবাংলায় এখন দফা একটা, স্লোগানও একটাই– শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। তিনি বলেন, সরকারের এত উন্নয়ন দেখে বিএনপি বুঝে গেছে, নির্বাচনে কী হবে। এ জন্য পদযাত্রা করতে গিয়ে সন্ত্রাস শুরু করেছে। বাঙলা কলেজের সামনে ও খাগড়াছড়িতে হামলা করেছে। বগুড়ায় স্কুলছাত্রীদের ওপর হামলা করেছে। তারা এখন ককটেল মারছে। দলীয় নেতাকর্মীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, মাথা গরম করবেন না। বিএনপি পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করতে চাইবে। ওদের মাথা গরম, কিন্তু আমরা শান্তি চাই। আমরা ক্ষমতায়, আমরা কেন গোলমাল করতে যাব? দেশে যত শান্তি থাকবে, তত আমাদের লাভ। ভোট যত বাড়বে, আমাদেরই জয় হবে। খেলা হবে। ডিসেম্বরে নির্বাচনে ফাইনাল খেলা, আসল খেলা হবে। একদিকে জনগণের শক্তি, অন্যদিকে সন্ত্রাসের শক্তি আর তাণ্ডব।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ বলেন, বিএনপি লাঠি নিয়ে মিছিল করে ভয়ে, নাকি ভয় দেখাতে? লাঠি দিয়ে ভয় দেখাতে যাবেন না, উল্টো বিপদ হবে। আওয়ামী লীগ ভয় পাওয়ার দল নয়। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি আমাদের পায়ে পাড়া দিয়ে ঝগড়া করছে। যারা দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়, আমরা তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বিএনপি উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করছে। বাঙলা কলেজের সামনে তারা উস্কানিমূলক কথা বলেছে, জনতা জেগে উঠেছিল। প্রতিবাদও করেছে। আজও তারা নানা জায়গায় উস্কানি দিচ্ছে। নেতাকর্মীকে বলব– কারও উস্কানিতে পা দেবেন না।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল প্রমুখ। বিকেল ৩টায় এই শোভাযাত্রাপূর্ব সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও দুপুরের পর থেকেই ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নেতাকর্মী ব্যানার-ফেস্টুনসহ মিছিল নিয়ে সাতরাস্তায় জড়ো হতে থাকেন। মহানগর উত্তরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট থেকে আওয়ামী লীগ ছাড়াও মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, মৎস্যজীবী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী সমবেত হন। বিকেল নাগাদ নাবিস্কো ও তিব্বত এলাকা জনারণ্যে পরিণত হয়।
রংবেরঙের পোশাকে সজ্জিত নেতাকর্মীর হাতে ছিল দলীয় ও জাতীয় পতাকা এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা, বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতিসদৃশ নানা ধরনের ফেস্টুন। কেউ কেউ ট্রাক ও পিকআপসহ যানবাহনে সরকারের উন্নয়নের চিত্রসংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন। ব্যান্ড পার্টি ও বাদ্য-বাজনার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন ও নির্বাচনী প্রচারের গান বাজান তারা। বিকেলে তেজগাঁও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিপরীতে সড়কে খোলা ট্রাকের অস্থায়ী মঞ্চে শুরু হয় সমাবেশের আনুষ্ঠানিকতা। সমাবেশ শেষে কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতাদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বনানীতে গিয়ে শেষ হয়। দুই দিনের এই কর্মসূচির প্রথম দিনের মতো গতকালের শোভাযাত্রা ও সমাবেশকে ঘিরে বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজট দেখা দেয়। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।